শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

স্মৃতির পাতা-2 আমার বয়স যখন ৫-৬ বছর আমি তখন আমার বড় খালার বাড়িতে, খালার বাড়িতে কেন? সে ঘটনা এখন লিখতে প্রস্তুত নই, আমি তখন সেখাকার এলাকার মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা দেয় এবং আমি পরিক্ষায় পাশ করি, মাদরাসার নাম চর আব্দুল্লাহ সিনিয়র মাদরাসা, বালুরচর, ফলকন, কমল নগর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, আমি খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলাম সেজন্য আমার কোন জায়গির বা মাষ্টর রাখার দরকার হয়, বরং আমার ক্লাসের অশিক্ষিত মাইয়া পোলাগো পড়াইয়া মানুষ করার দায়িত্ব এখন আমার হাতে সপে দিয়েছে, মাদসার ক্লাস শুরু হতো সকাল ১০ টায় শুরু হতো, আমি হাতমুখ ধুয়ে পাঞ্জাবি আর লুঙি পরে আর বইগুলান বুকের মাঝে জড়াইয়া আবার কখনো ডানহাত দিয়ে ধরে কোমড়ের কাছাকাছি ধরে রাখতাম, মাদরাসায় পড়া শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা স্কুলের পোলাপানের থেকে অনেক সুন্দর হয় এটা যেমন সত্য তেমনি সত্য তারা পড়ার চাইতে লিখতে বেশি পছন্দ করে, এজন্য হুজুর বা মাষ্টারগণ প্রতিদিন ১০ পাতা করে লেখা দিয়ে দিত লেখার লাইন তো একটাই থাকতো যেমন- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ বা মাবুদ নাই হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল, তবে বাসায় বাড়িরকাজ লিখতে মনে থাকতো না মাদ্রাসায় আসার আগে, ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বে কিংবা ক্লাসের ফাকে বসে লিখতাম আবার কোন বিষয়ের লেখা লেজার বা টিফিন এরে পরে থাকলে সেগুলো টিফিনের খাওয়ার সময় পোলাপাইনরে দিয়া লিখাইতাম, বা একজনের টা আরেকজনে লিখতো যেইভাবে হোক লেখা শেষ করতাম, যেকোন বিষয় হোক ১০ পাতা লিখতে হবে, আর ক্লাস শুরুর আগেই টেবিলে খাতা ভর্তি হয়ে যেতো কেউবা আবার স্যার ক্লাসে ঢুকার আগমুহুর্তে কিংবা স্যার বসার আগে আগে সবার খাতার নিচে নিজের খাতাটা আস্তে করে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতাম কয়েক মিনিটে খাতা দেখা শেষ হয়ে যেতো, 

তারপর বাড়ির পড়া নিবে ওই সময়ের শিক্ষার্থীদের মনে যে একটা ভয় থাকতো তা এখনো আমার মনে আছে আর তখনতো প্রতি ক্লাসে এক করে চিকন লাঠি থাকতো না থাকলেও অন্যক্লাস থেকে ধার করে আনতো, মাষ্টার বা হুজুর তো আগে জানে যে কোন শিক্ষার্থী কেমন সে অনুযায়ী যারা পড়া পারে না তাদের পড়া আগে জিজ্ঞেস করতেন আর কশাইয়া বেতের লাঠি দিয়ে হাতে মারতেন কিংবা ডাস্টার দিয়ে মাথায় মারলে টুং করে আওয়াজ দিত, আমি সব পড়া পাড়ি কিন্তু হজুরে জিজ্ঞেস করলে আর পারতাম না, আর মাঝে মাঝে পড়া যখন পারতাম অন্যের বেতের আঘাতের দিয়ে চেয়ে থাকতাম আর আমায় যখন বেত দিয়ে আঘাত করতো আমি খালি পিঠ ঘসতাম আর মনে মনে বলতাম হালারে বাইরে গেলে আমিও কইশা পিটাইম, আরেকটি মাইর খুবই জনপ্রিয় ছিল তখনকার একাডেমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সেটা হলো দুই আঙ্গুলে ফাকে কলম রেখে অরে চাপ দিত চাপের লগে আঙ্গুল দুই টা হাত থেকে সাময়িকভাবে অবসর নিতো, আর কান মলার সে কি বলবো সেটা তো আরো মারাত্মক কথায় আছে কান টানলেই মাথা আসে আর তখন কান মলার পাশাপাশি থাপ্পর চোপর তো আছেই বোনাস বা ফ্রি,


 টিফিনের আগে বসে বসে ভাবতাম চারটি ক্লাস শেষ দুই ক্লাসে মাইর খাইছি আর দুইক্লাসে মজা পাইছি, তো টিফিনের সময় কেউ কেউ খাওয়া দাওয়া করতো আর খাওয়া শেষে জোহরের নামাজের পর ক্লাস শুরু হতো, টিফিনের পর অনেক মজা হয় কেউ পুরো টিফিন পিরিয়ড ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় কেউ আবার টিফিনের সময় পালিয়ে যেতো, আবার কেউ মাইরের ডরে ক্লাসের বাহিরে থাকতো ঐ ক্লাস শেষ হলে পরের ক্লাসে ঢুকতো সবচেয়ে মজার যেটা ছিল সেটা হলো টিফিনের পর যদি কোন শিক্ষক অসুস্থ বা আজকে মাদ্রাসায় আসে নাই কিংবা জরুরী কাজে বাইরে গেছে তাইলে তো মজার কোন শেষ নাই, সেই ফাকে আমরা একটু কলম কলম খেলি কেউবা চোর পুলিশ খেলি কেউবা আবার প্রেমের খেলা খেলি, তবে সেটা মাদ্রাসার পিছনে বা মাদ্রাসা থেকে একটু অদুরে কোন নির্জন জায়গায় একটি ক্লাস শেষ করে আসতো যেখানো কোন শিক্ষক নাই, শুধু তুমি আর আমি, এইরকম ক্লাস হলেই ভালো হইতো, তারপর ছুটির আগের ক্লাস অনেক মজা হতো কারণ এই ক্লাস পড়েই তো ছুটি, হয়তো কোন বাংলা বিষয় বা কোন সহজ বিষয় থাকতো বলেই সবাই পড়া পারতো আর এ জন্য সবাই খুশি থাকতো, 

আর ছুটি হলে সবাই একসাথে দৌড় দিতাম আর দৌড়ের লগে কেউ পইরে দিয়ে চিত্তারাইয়া যাইত, কয়েক মিনিটে পুরো মাদরাসা খালি হয়ে যেতো আবার কোন কোন সময় ক্লাস করতাম না জামাকাপড় পরে বাসা থেকে বের হতাম ঠিকই কিন্তু ক্লাসে যেতাম না শুধু মাত্র ছুটির সময় পোলাপানের লগে এক হয়ে চলে আসা আর আসতে আসতে বলতাম তুই আমার কথা ঘরে কবাছান তাইলে কিন্তু তোরে কালকে পিটাইম আর যদি আম্মু জানতেন আসলেই আমার ঘরের বড় মাষ্টার আমার মা আমাকে ঐ বেতের লাঠি, কিংবা শুকনা মরিচের গুড়ার হালকা ছিটা চোখে পরতো আর চোখ ঘসতে ঘসতে পুকুরে ঝাপ দিতাম, এভাবেই ছোট বেলার ক্লাসগুলো শেষ করাতাম যেটা এখনো ভাবনায় ফেলে দেয় আর ভাবতে ভাবতেই আজ আমি খুবই ভাবুক হলে গেলাম-----স্মৃতির পাতা-৩ পরের খন্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে,